https://eeraboti.com/uploads/images/ads/Trust.webp

গরমে ঘামাচি আর ঘামের দানা নিয়ে অতিষ্ঠ? জেনে নিন প্রতিকারের পরীক্ষিত ঘরোয়া উপায় ও ডাক্তারি পরামর্শ

top-news
  • 20 Dec, 2025
https://eeraboti.com/uploads/images/ads/eporichoy.webp

ঘামের দানা ও ঘামাচি – গরমে ত্বকের যন্ত্রণার শেষ কোথায়?

বাংলাদেশের আবহাওয়া মানেই হলো আর্দ্রতা আর ভ্যাপসা গরম। চৈত্র-বৈশাখ মাস থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত আমাদের ত্বকের ওপর দিয়ে যে ঝড় যায়, তার প্রধান ফলাফল হলো ঘামাচি (Heat Rash) এবং ঘামের ফলে সৃষ্ট ছোট ছোট ব্রণ বা দানা (Sweat Pimples)। অনেকেই আয়নায় মুখ বা পিঠের দিকে তাকিয়ে কনফিউজড হয়ে যান—এটা কি সাধারণ ব্রণ, এলার্জি নাকি ঘামাচি?

বিশেষ করে যারা পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন, রিকশায় রোদে ঘোরেন কিংবা কিচেনে দীর্ঘক্ষণ রান্না করেন, তাদের জন্য এই সমস্যাটা নিত্যদিনের সঙ্গী। চুলকানি, জ্বালাপোড়া আর ত্বকের লালচে ভাব অনেক সময় আমাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। আজকের এই লেখায় আমি কোনো কঠিন ডাক্তারি ভাষা ব্যবহার করবো না। একদম আমাদের দেশি প্রেক্ষাপটে, কীভাবে খুব সহজে এবং কম খরচে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তার বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ঘামের দানা বা ঘামাচি আসলে কেন হয়? (সায়েন্সটা একটু জানি)

সহজ বাংলায় বললে, আমাদের ত্বকের নিচে ঘাম বের হওয়ার যে নালি বা ডাক্ট (Duct) থাকে, সেগুলো যখন ব্লক হয়ে যায়, তখনই ঘামাচি বা দানা তৈরি হয়।

১. ব্লকড সোয়েট ডাক্ট: আমাদের দেশের বাতাসে হিউমিডিটি বা আর্দ্রতা অনেক বেশি। ফলে ঘাম সহজে শুকায় না। এই অতিরিক্ত ঘাম আর বাইরের ধুলোবালি মিলে লোমকূপ বন্ধ করে দেয়। ঘাম বের হতে না পেরে চামড়ার নিচে জমে দানা তৈরি করে।
২. টাইট পোশাক: আমরা অনেকেই ফ্যাশনের চক্করে খুব টাইট ফিটিং কাপড় বা সিন্থেটিক কাপড় পড়ি। এতে বাতাস চলাচল করতে পারে না এবং ঘর্ষণ (Friction) তৈরি হয়, যা ঘামাচির অন্যতম কারণ।
৩. ফাঙ্গাল ইনফেকশন: অনেকে ঘামের দানাকে সাধারণ ব্রণ মনে করেন। কিন্তু গরমে ঘামের কারণে 'ম্যালাসেজিয়া' (Malassezia) নামক এক ধরনের ইস্ট বা ফাঙ্গাসের বংশবিস্তার ঘটে। একে 'ফাঙ্গাল অ্যাকনি' বলা হয়, যা দেখতে হুবহু ঘামাচির মতো।
৪. হেভি মেকআপ ও ক্রিম: গরমে মুখে ভারী ফাউন্ডেশন বা তেলতেলে ময়েশ্চারাইজার মাখলে ত্বক শ্বাস নিতে পারে না। ফলাফল—ঘামের দানা।

মিথ বনাম বাস্তবতা (Myths vs Facts)

সমাজে এমন অনেক কথা প্রচলিত আছে যা আসলে ভুল। আসুন জেনে নিই আসল সত্যটা।

  • মিথ: "ঘামাচি হলে বেশি করে ট্যালকম পাউডার মাখতে হবে।"

    • বাস্তবতা: ভুল! পাউডার সাময়িক আরাম দিলেও এটি ঘাম এবং তেলের সাথে মিশে লোমকূপ আরও বাজেভাবে বন্ধ করে দেয়। এতে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি থাকে।

  • মিথ: "ঘাম হওয়া ভালো, এতে শরীর ডিটক্স হয়।"

    • বাস্তবতা: ঘাম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, এটা ঠিক। কিন্তু সেই ঘাম যদি দীর্ঘক্ষণ ত্বকে লেগে থাকে, তবে তা ব্যাকটেরিয়ার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়। ঘাম হওয়া সমস্যা না, ঘাম জমে থাকাটাই সমস্যা।

  • মিথ: "রোদে গেলে ঘামাচি বাড়ে।"

    • বাস্তবতা: শুধু রোদ নয়, ছায়াতে থেকেও যদি আপনি গরমে ঘামেন এবং বাতাস না লাগে, তবুও ঘামাচি হতে পারে।

ধাপ ১: ঘরোয়া প্রতিকার (আগে হাতের কাছের সমাধান)

ঘামাচি বা ঘামের দানা কমাতে সবসময় ওষুধের দরকার হয় না। আমাদের রান্নাঘর বা ছাদবাগানেই আছে দারুণ সব সমাধান।

১. নিম পাতার জাদুকরী ব্যবহার:
নিম হলো প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল।

  • ব্যবহার: এক মুঠো নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে ২ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি সবুজ হয়ে ১ কাপে নেমে আসলে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। গোসলের পর এই পানি তুলায় ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান। অথবা নিম পাতা বেটে সরাসরি প্যাক হিসেবে লাগাতে পারেন (তবে বেশিক্ষণ রাখবেন না, ত্বক ড্রাই হতে পারে)।

২. শসা ও অ্যালোভেরা জেল:
ত্বককে ঠান্ডা করতে এদের জুড়ি নেই।

  • ব্যবহার: শসা গ্রেট করে রস বের করে নিন। এর সাথে ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। বাইরে থেকে এসে মুখ ধুয়ে এই ঠান্ডা মিশ্রণটি মুখে ও গলায় লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। জ্বালাপোড়া মুহূর্তেই কমে যাবে।

৩. মুলতানি মাটি ও গোলাপ জল:
যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত এবং ঘাম বেশি হয়, তাদের জন্য এটা বেস্ট।

  • ব্যবহার: সপ্তাহে ২-৩ দিন মুলতানি মাটি ও গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে লাগান। এটি অতিরিক্ত তেল শুষে নেয় এবং লোমকূপ পরিষ্কার রাখে।

৪. বরফের সেঁক:
চুলকানি খুব বেশি হলে পাতলা সুতি কাপড়ে ২-৩ টুকরো বরফ পেঁচিয়ে ঘামাচির ওপর আলতো করে চেপে ধরুন। সরাসরি বরফ ত্বকে লাগাবেন না, এতে 'আইস বার্ন' হতে পারে।

ধাপ ২: লাইফস্টাইল পরিবর্তন (যেগুলো না করলেই নয়)

ওষুধ লাগালেন কিন্তু অভ্যাস বদলালেন না, তাহলে কোনো লাভ হবে না।

  • পোশাক নির্বাচন: গরমের দিনে সুতির হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। সিন্থেটিক, জর্জেট বা সিল্কের কাপড় ঘাম শুষতে পারে না। অন্তর্বাস বা ইনার-ওয়্যার যেন অবশ্যই সুতির হয় এবং প্রতিদিন ধোয়া হয়।

  • গোসলের নিয়ম: দিনে অন্তত দুইবার গোসল করুন। স্কুল বা অফিস থেকে ফিরে ঘাম শরীরে শুকাতে দেবেন না। গোসলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান (যেমন নিম সাবান) ব্যবহার করতে পারেন, তবে খুব কড়া সুগন্ধিযুক্ত সাবান এড়িয়ে চলাই ভালো।

  • বিছানার চাদর: প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার বিছানার চাদর ও বালিশের কভার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বালিশে জমে থাকা তেল ও ঘাম থেকে মুখে দানা ওঠে।

  • ডায়েট: ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত ঝাল ও তেল চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গরমে লাউ, পেঁপে, ডাবের পানি এবং লেবুর শরবত বেশি করে খান।

ধাপ ৩: কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন এবং মেডিকেল ট্রিটমেন্ট

ঘরোয়া উপায়ে কাজ না হলে বা দানাগুলো পেকে গেলে বা ব্যথা হলে বুঝতে হবে ইনফেকশন গভীরে ছড়িয়েছে।

  • স্যালিসাইলিক অ্যাসিড (Salicylic Acid): যদি ঘামের দানা বা একনি হয়, তবে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত ফেসওয়াশ বা টোনার ব্যবহার করতে পারেন। এটি লোমকূপের ভেতরের ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

  • ক্যালামাইন লোশন: ঘামাচির চুলকানি কমাতে ক্যালামাইন লোশন খুব নিরাপদ এবং কার্যকর। এটি ত্বককে শুষ্ক ও ঠান্ডা রাখে।

  • অ্যান্টি-ফাঙ্গাল শ্যাম্পু: যদি দেখেন দানাগুলো কপালে এবং হেয়ারলাইনের কাছে বেশি হচ্ছে, তবে কেটোকোনাজল (Ketoconazole) যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করে দেখতে পারেন। অনেক সময় মাথার খুশকি বা ফাঙ্গাস থেকে মুখে দানা ছড়ায়।

বাচ্চাদের ঘামাচি ও যত্ন

বড়দের চেয়ে বাচ্চাদের ঘামাচি বেশি হয় কারণ তাদের ঘর্মগ্রন্থি পুরোপুরি গঠিত থাকে না। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে:

  • কখনোই ভারী তেল বা লোশন মাখাবেন না।

  • সবসময় ফ্যানের নিচে বা খোলামেলা জায়গায় রাখুন।

  • নখ ছোট রাখুন যাতে চুলকে ঘা না করে ফেলে।

উপসংহার

গরমে ঘামাচি বা ঘামের দানা খুব সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে এটি ফোঁড়া বা বড় ইনফেকশনের রূপ নিতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বা হাইজিন মেইনটেইন করাই হলো এর প্রধান চিকিৎসা। খুব বেশি ঘামলে সাথে ওয়েট টিস্যু বা রুমাল রাখুন, ত্বক মুছে ফেলুন। আর মনে রাখবেন, সব দানাই ব্রণ নয়, তাই না জেনে মুখে উল্টাপাল্টা ক্রিম লাগাবেন না। ত্বককে শ্বাস নিতে দিন, সুস্থ থাকুন।

TrustShopBD (www.trustshopbd.com) is one of the most trusted places in Bangladesh to buy authentic and premium products related to ‘skincare and personal hygiene’, known for reliable delivery, genuine quality, and responsive customer support.



https://eeraboti.com/uploads/images/ads/Genus.webp

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *